এ,এস,এম,রেজাউল করিম পারভেজ :
প্রত্যন্ত গ্রামে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তো দূরের কথা, এমবিবিএস কিংবা সাধারণ ডাক্তার পাওয়া অনেক সময় দূরহ ব্যাপার।দূরত্বের কারণে ডাক্তার না পাওয়ায় এবং আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায়,সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ অনেক সময় মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে।এমন পরিস্থিতিতে, অল্প কিছু ডাক্তারকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে চিকিৎসা সেবা দিতে কখনো কখনো দেখা যায়।তাদের মধ্যে একজন হলেন, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার অরূপ পাল।তিনি অফিস টাইমের শেষে গরিব রোগীদের সেবা দিতে আন্তরিক ভাবে ছুটে যান দূরের অবহেলিত গ্রামে। তাই লক্ষ্মীপুরে গরীবের আস্থা, ভরসা ও ভালোবাসার ডাক্তার হয়ে উঠেন।
সাবলীল ভাবে ডাক্তার অরূপ পালের সাথে কথা হয়েছিল, প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে।সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলোঃ
প্রশ্নঃ বিভিন্ন কারণে ডাক্তারদের শহরে থাকাটাই সকল দিক থেকেই সুবিধাজনক। আপনি রোগী দেখার জন্য প্রত্যন্ত গ্রামকে কেন বেছে নিলেন?
উত্তরঃ ডাক্তার অরুপ পাল বলেন,আমার বাবা রত্নদ্বীপ পাল লক্ষ্মীপুর জেলার প্রবীণ ও স্বনামধন্য চিকিৎসক হিসেবে সমাদৃত। তিনি সকল সময় গরীব অসহায় রোগীদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিতে দেখতে এবং তাদের প্রতি আন্তরিক থাকার চেষ্টা করতেন।সে বিষয়টি ছোটবেলা থেকেই আমাকে প্রভাবিত করে আসছে। ছোটবেলা থেকে ভাবতাম একসময় বাবার মতো ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব।এখন আমার সেই সময় এসেছে।
তাছাড়া আমি দেখেছি গ্রামের সাধারণ মানুষ বড় চিকিৎসকদের কাছে যেতে পারে না।তাদের আর্থিক সংকটও রয়েছে। বিষয়টি আমাকে আরো বেশি নাড়া দেয়। আমি নিজেই ইচ্ছায় তাদের চিকিৎসা দেয়ার কথা ভাবি এবং চিকিৎসা দিচ্ছি। এতে আমি মানবিক তৃপ্তি অনুভব করি।এছাড়া, গ্রামের মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে খুব বেশি প্রভাবিত করে।সাধারণ অসহায় গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমি আনন্দ অনুভব করি।তাছাড়াও ডাক্তার হিসেবে আমাদেরতো কিছু কর্তব্য আছেই।সেটাকে পাশ কাটানোর সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রশ্নঃ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মানুষের কোন অনুভূতি ভালো লাগে?
উত্তরঃ গ্রামের মানুষ খুবই আন্তরিক এবং সহজ সরল। আমার চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে যখন একজন গ্রামের রোগী এসে দেখা করে। তার মতো, তার ভাষায় ধন্যবাদ দেয়। এবং বলে
“আমি এখন ভালো আছি,সুস্থ্য আছি”।
এটাই আসলে আমার সবচেয়ে বড় সফলতা ও আত্মতৃপ্তির কারণ।
প্রশ্নঃ গ্রামের মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কেমন? এবং যদি তারা অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল হয় তখন আপনি কি করেন?
উত্তরঃ আমি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মোল্লারহাটে রোগী দোখি।এই এলাকার পাশে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী। এখানকার স্থানীয় প্রায় সবাই জেলে, কৃষিজীবী এবং গবাদি পশু পালনকারী।
সাধারণত এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। আমি নূন্যতম ভিজিটে এখানে রোগী দেখি।
তাছাড়া যাদের ডাক্তারের ভিজিট দেয়ার ক্ষমতা নাই, তাদেরকে টাকা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি।এ সকল খেটে খাওয়া মানুষ আমার চিকিৎসা সেবায় সুস্থ্য হওয়ার পর তাদের আত্মতৃপ্তি ও মুখের হাসিটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।
প্রশ্নঃ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পড়তে হয়?
উত্তরঃ গ্রামে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মতো ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার নেই। এখানে আসা-যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয়। যাতায়াতের সমস্যা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় দেখা দেয় এখানে।তবে গরীব রোগীদের প্রতি আন্তরিক হলে এই সমস্যা কোন সমস্যায় বলে মনে হবে না।
প্রশ্নঃ গ্রামে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কি কোন মেসেজ দিবেন?
উত্তরঃ বিভিন্ন কারণে আমরা শহর মুখী। সবাই শহরে থাকতে চাই। আমরা সবাই যদি গ্রামে সময় দিয়ে রোগীদের সেবা করি, তাহলে মানুষের উপকারের পাশাপাশি আত্মতৃপ্তি পেতে পারি।এক সময় মনে হতে পারে এটি অনেক সম্পদের চেয়ে মূল্যবান।
Leave a Reply