অপরাজেয় কন্ঠ ডেস্ক: আপনার জীবনে খুব কাছের মানুষগুলো ছাড়াও বিভিন্ন গতিপথে অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, সখ্য গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলো যদি অনেকদূর এগোতে তাকে, সে যদি আপনার সুখে-দুঃখে সবসময় কাছে থাকে, আপনার জীবনের মোটামুটি সবই তার জানা থাকে তাহলে অবশ্যই সে আপনার বন্ধু। তবে এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করা যেমন সময়সাপেক্ষ, আবার বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখাও বেশ কষ্টকর। আপনি যদি একজন ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে চান তাহলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবেঃ
১)বন্ধুত্বে বিশ্বস্ত থাকা
বিশ্বাসই ভালোবাসার মূলশক্তি। তাই বন্ধুত্বে বিশ্বাস রক্ষা করা খুবই জরুরি। কোনো পরিস্তিতিতে বা তৃতীয় কোনো পক্ষের কথার সূত্র ধরে বন্ধুত্বের বিশ্বাসভঙ্গ কারোই কাম্য নয়। প্রকৃত বন্ধুকে সর্বদা মাথায় রাখতে হবে যে বন্ধুকে বিশ্বাস করতে হবে, প্রয়োজনে নিজে পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে হবে।
২)দুঃসময়ে পাশে থাকুন
বন্ধুর বিপদে আগে-পরে কিছু না ভেবে সাড়া দেওয়াই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়। প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে বন্ধুর বিপদে তাকে সাহায্য করাই বন্ধুত্বের অন্যতম ব্রত। আর আপনার দুঃসময়ে ঠিক এমনভাবে যদি বন্ধু পাশে থাকতে না পারে তাহলে সেও তো আপনার প্রকৃত বন্ধু হতে পারলো না।
৩)বন্ধুদের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো
বন্ধুর ইচ্ছাকে সবসময় সম্মান জানানো উচিত। আর তা পছন্দ না হলে সরাসরি তাকে বলুন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা অবশ্যই খুব জরুরি। আর সমালোচনা করতেই পারেন, তবে কটুক্তি করবেন না। সমালোচনা করলেও সেই ভাষা ব্যবহারে সচেতন হতে শিখুন। আর বন্ধু ভুল করলে তা শুধরে দিন। আর বন্ধুর প্রতি অবশ্যই বিনয়ী হন।
৪)বন্ধুর প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষি হতে চেষ্টা করুন
ভালো বন্ধু সবসময় বন্ধুর ভালো চায়। নিজের ভালো হোক সেটা সবারই কাম্য। তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। প্রকৃত বন্ধু চাইবে নিজের উন্নতির পাশাপাশি বন্ধুরও উন্নতি হোক। যেখানেই থাকুন, যত দূরে থাকুন বন্ধুর মঙ্গল কামনা করুন। যতটুক পারুন, তার ভালোর জন্য কাজ করুন।
৫)বন্ধুত্বে সৎ থাকবেন
বন্ধুত্বে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। মিথ্যা কোনো কথা বা ধারণা দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়াই যায়, কিন্তু তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আপনি যা সেটাই প্রকাশ করুন, জোর করে ভালো হতে চাইবেন না। কৃত্রিমতা বর্জন করে নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলুন বন্ধুর কাছে, বন্ধুর কাছে স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করুন। মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোনো বিকল্প নেই।
৬)বন্ধুকে সময় দেওয়া
দীর্ঘদিনের বন্ধুরা একে অন্যের পেছনে সময় ব্যয় করে। মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বন্ধুরা হয়তো আগের মতো সময় দিতে পারে না। এর ফলে যে দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটবে, তা নয়। নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরনো সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিতে হয় প্রতিনিয়ত। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরনো বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলা একদমই উচিত নয়।
৭)ভালো শ্রোতা হওয়া
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ভালো শ্রোতা হওয়াও খুব জরুরি। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় শুধু নিজের কথাকেই প্রাধান্য দেবেন না। বন্ধুকেও কথা বলতে দিন, আলোচনায় উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে দুজনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা বুঝে নিন। বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে উপহাস না করাই প্রকৃত বন্ধুর দায়িত্ব।
৮)বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে শেখা
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে একজন প্রকৃত বন্ধু সবসময়ই সম্পর্ককে প্রাধান্য দেন। কারণে-অকারণে নানা সমস্যা বন্ধুত্বে তৈরি হতেই পারে। এতে দূরত্ব তৈরি হবে, বন্ধুত্ব হারিয়েও যেতে পারে। যারা দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে চান তাদের স্বাভাবিক আর প্রাণচাঞ্চল্য রাখতে হবে। বন্ধুত্বের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, অনুরাগ, ব্যস্ততা, এড়িয়ে চলা, নার্ভাস ভাব দূরে রাখুন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
Leave a Reply